শবে কদরের নামাজ, লাইলাতুল কদরের দোয়া ও আমল – কদরের রাতের ফজিলত

শবে কদরের নামাজ, দোয়া ও আমল – কদরের রাতের ফজিলত ও করণীয়
শবে কদর বা লাইলাতুল কদর কি?
শবে কদর বা লাইলাতুল কদর হল বছরের শ্রেষ্ঠ রাত, যা পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশ দিনে অবস্থিত। আল্লাহ তায়ালা এই রাতে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলে ঘোষণা করেছেন।
শবে কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত
শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে অনেক বর্ণনা এসেছে। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন—
“লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” (সূরা কদর: ৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“যে ব্যক্তি শবে কদরে ঈমান ও সওয়াবের আশায় ইবাদত করে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহিহ বুখারি)
শবে কদরের নামাজ (কদরের নামাজ)
শবে কদরের রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয় নবী (সা.) নিজেও এই রাতে গভীর ইবাদতে লিপ্ত থাকতেন।
কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম:
১. দুই রাকাত করে যত সম্ভব নফল নামাজ পড়তে পারেন।
২. প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস বা সূরা কদর পড়তে পারেন।
৩. রাতের শেষ ভাগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে বিশেষ সওয়াব পাওয়া যায়।
৪. নামাজের পর আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করুন।
লাইলাতুল কদরের দোয়া (কদরের দোয়া)
উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন:
“ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আমি শবে কদর পেয়ে যাই, তাহলে কোন দোয়া পড়ব?”
তিনি বললেন:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি”
বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
শবে কদরের আমল
১. নফল নামাজ পড়া – যত বেশি সম্ভব নফল নামাজ পড়ুন।
2. কুরআন তিলাওয়াত করা – এই রাতে কুরআন তিলাওয়াত করলে হাজার মাসের সওয়াব পাওয়া যায়।
3. দোয়া ও ইস্তেগফার – আল্লাহর কাছে নিজের ও পরিবারের জন্য ক্ষমা ও হেদায়েত চাওয়া উচিত।
4. দরুদ শরীফ পড়া – রাসুল (সা.)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করুন।
5. সদকা ও দান – এই রাতে গরীব-দুঃখীদের সাহায্য করলে অনেক সওয়াব লাভ হয়।
কদরের রাতের ফজিলত
১. হাজার মাসের চেয়ে উত্তম – এই রাতের ইবাদত ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের সমান।
২. ফেরেশতারা নেমে আসেন – এই রাতে জিবরাইল (আ.)-সহ অসংখ্য ফেরেশতা দোয়া কবুলের জন্য পৃথিবীতে অবতরণ করেন।
3. গুনাহ মাফ হয় – যারা এই রাতে ইবাদত করে, আল্লাহ তাদের পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেন।
শবে কদর কখন হয়?
শবে কদর রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতে (২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯) হতে পারে। তবে ২৭তম রাতকে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করা হয়।
শবে কদর কিভাবে কাটাবেন?
- ইবাদতে ব্যস্ত থাকুন, ঘুম কমিয়ে দিন।
- কুরআন, দোয়া ও ইস্তেগফারে সময় ব্যয় করুন।
- পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইবাদতে যুক্ত হন।
শেষ কথা
শবে কদরের মতো ফজিলতপূর্ণ রাত আমাদের জীবনে বারবার আসে না। তাই এই রাতের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো উচিত। বেশি বেশি নামাজ, দোয়া ও ইবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করুন।